শুক্রবারে সিনেমা দেখতাম। দিন ঘুরে নতুন
নিয়ম
বৃহস্পতি, শনিও হত। পুরো বাড়িতে একটা
সাদাকালো
টিভি, ঘরভর্তি মানুষ। সাড়ে তিনটায়
সিনেমা শুরু, তিনটা
থেকেই জায়গা দখলের চেষ্টা। সেই সুবাদে
সিনেমা শুরু হবার আগে আবহাওয়ার খবর
দেখা,
বৌদ্ধদের ত্রিপিটক পাঠ শোনা। তারপর
সেই
মাহেন্দ্রক্ষণ "সিনেমা শুরু"। মনেমনে
প্রার্থনা,
এডব্রেস (বিজ্ঞাপন) যেন না আসে। কিন্তু
বিজ্ঞাপন
ঠিকই আসে। বড়রা বিজ্ঞাপনের
ফাঁকেফাঁকে
অনেক কাজ সেরে নিত। আমরা ছোটরা,
আঙুল
দিয়ে বিজ্ঞাপণ গুনতাম। ত্রিশটা
বিজ্ঞাপণ দেখানোর
পরই সিনেমা শুরু হবে ততোদিনে আমাদের
মুখস্ত
ছিল। রুবেল, দিতি, জসীম, সাবানা,
ববিতা, রাজ্জাক ছিল
সেসময়ের কাঙখিত নায়ক নায়িকা। এদের
কেউ নেই
মানে সিনেমা পানসে। রাজীব, রানি,
শরীফ, জাম্বু
ভিলেন থাকার কারণে কতো গালিই যে
খেত তার
হিসেব নেই। নায়ক মার খেলে আমাদের
আফসোস হত, ভিলেনকে মারার সময় বলতাম,
"মার..মার.."।
কোকাকোলার সাথে পাওয়া "ইও ইও"
খেলনা ছিল
বেশ জনপ্রিয়। হাতের মধ্যে সুতা দিয়ে
পেচিয়ে
চ্যাপটা আকৃতির রাউন্ড গোলকটা কে করবার
হাতে
আপ ডাউন করাতে পারে তা নিয়ে হত
প্রতিযোগিতা।
বিড়িং নিয়ে খেলা হত। মেয়েরা কাপড়ের
তৈরি পুতুল
বানাত, সেই পুতুলের জামা বানাতো,
বিয়েও দিত
অনুষ্ঠান করে। টাকাওয়ালা বাবার মেয়েরা
খেলত একটা
ব্যাটারিচালিত পুতুল দিয়ে। সেই পুতুলের
সুইচ অন
করলেই বাজত ‘চল ছাইয়া ছাইয়া’ গান।
ছেলেদের সব
থেকে দামী খেলনা ছিল রবোকোপ আর
পিস্তল।
বিকেলটা ছিল ছুটোছুটির। তখন খেলতাম
ইচিং বিচিং,
কুতকুত, বৌ ছি, ফুলের টোকা, বরফ পানি,
ছোঁয়াছুঁয়ি,
সাতচারা, ডাংগুলি, মাংস চোর। খুব
ছোটরা খেলার বায়না
ধরলে তাদেরকে "দুধভাত" হিসেবে খেলায়
নিতাম,
তবুও ছোট বলে তাকে বঞ্চিত করতাম না।
খেলার
মাঝে যদি কারো সাথে ঝগড়া হত তাহলে
কাইন
আঙুলে আড়ি নিতাম, দু দিন কথা বলতাম
না। তারপর আবার
আনুষ্ঠানিক ভাবে দুই আঙুলে ‘ ভাব’ নিতাম;
এখন
থেকে আবার কথা বলা যাবে। তখন আবার
রক্তের
বান্ধবীর প্রচলন ছিল। কারও হাত কাটলে
ছুটে
যেতাম রক্তের সই পাতাতে। আমার কাটা
আঙুলের
সাথে ভাল আঙুল মিলিয়ে হতাম "রক্তের
বান্ধবী,
কোনদিন এই বন্ধুত্ব যাবেনা"। কই গেল
আমার সেই
বান্ধবী গুলা??
সন্ধ্যা হলেই শুরু হত যন্ত্রণা। বই খাতা খুলে
পড়তে
বসো। সবার আগে পড়তাম সমাজ। বেশি
বিরক্ত লাগত
অংক। কি যে নল চৌবাচ্চা, ১ম পাইপ, ২য়
পাইপ। মাথাটা
এলোমেলো করে দিত।তখন নিয়ম করে
কারেন্ট যেত, এতো চার্জার লাইট ছিলনা।
মোম,
হারিকেনি ভরসা। অংক করতে বিরক্তি
থেকে মুক্তি
পেতে দোয়া করতাম, "আল্লাহ, কারেন্ট
যা"।
হিসেবি মায়েরা কেরোসিন, মোম খুব
জ্বালাত না।
কারেন্ট গেলেই পড়া থেকে মুক্তি। যেই
কারেন্ট যেত অমনি সবাই একসাথে চিৎকার
করে
বেড়িয়ে আসতাম ঘর থেকে। শুরু হয় নতুন
খেলা,
"চোখ পলান্তিস" (অন্ধকার থেকে লুকিয়ে
থাকা
একেক জনকে খুঁজে বের করা) তবে আলিফ
লায়লা দেখার সময় কারেন্ট গেলে মন ভীষণ
খারাপ
হত।
ঈদ আসলে আমরা ঈদ কার্ড কিনতাম।
"মিষ্টি মিষ্টি
হাসিতে, দাওয়াত দিলাম আসিতে"- এমন
ছন্দ লিখে বন্ধু
বান্ধবদের দাওয়াত দিতাম। সেই সময় সব
চাইতে দামী
জরি ওয়ালা ঈদ কার্ড যেটা ছিল সেটা
খুললে ভেতর
থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে মিউজিক বাজত।
ঈদের জামা
ঈদের দিন ছাড়া কাউকে দেখাতাম না,
পুরানো হয়ে
যাবে ভেবে। জামা লুকিয়ে রাখা ছিল
সেসময়
আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
কলমের নিপ মুখে নিয়ে কামড়াতে
কামড়াতে
ক্লাশের সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে
ভাবতাম, এখন
যদি ফ্যানটা খুলে পড়ে তাহলে সেটা কার
মাথায়
পড়বে ? ভাবনা শেষে দেখতাম ফ্যান
ফ্যানের
জাগাতে আছে, কলমের নিপটা আর কলমে
লাগানো
যাচ্ছেনা, কামড়ে চ্যাপটা হয়ে গেছে।
পেন্সিলের মাথার রাবার খেয়ে ফেলেছি
কত
হিসেব নেই। পেন্সিল কাটার হারিয়ে মরা
কান্না কাঁদতাম।
খেলার সময় নিয়ম ছিল, যার ব্যাট সে আগে
ব্যাটিং
করবে। যার র্যাকেট সে কখনো বেট্টাস
হবেনা।
প্রতিদিন কটকটি ওয়ালা আসত, সমপাপড়ি
বেচত। সেই
কটকটি বা সমপাপড়ি কিনতে কোন টাকা
লাগত না।
পুরনো কাগজ, প্লাস্টিকের কিছু একটা
দিলেই কটকটি
পাওয়া যেত। তারা ডাকতোই এই বলে,
"লাগবো পুরানা
ভাংগাচুড়া, লোহা লক্কড়, ছিঁড়াফাঁরা জুতা
দিয়া কটকটি"। আমরা
এক টাকা দিয়ে বোম্বে আইসক্রিম খেতাম,
সেকারিন মিশানো। খেলেই জিভ ঠোট
লাল হয়ে
যেত। সেই লাল ঠোট নিয়ে আমাদের কি
গর্ব,
আজো চোখে ভাসে।
কী সব সোনালী দিন ছিল আমার। আজকের
অলস
দুপুর এইসব ভেবেই কেটে গেল। নব্বইয়ের
দশক...কোথায় হারিয়ে গেল। প্রযুক্তি
আমাদের
কোথায় এনে দাড় করালো। আহা... শৈশব..
ঝলমলানি
শৈশব।
কি বন্ধুৱা মনে কি পৱে সেই সব দিন গুলোৱ
কথা??????
,,
ভাই এই গুলা মনে হলে মন টা খারাপ হয়
ঠিকি কিন্তু যখন ভাবি এগুলা আমাদের
ছোট বেলার কাহিনী তখন খুব ভালো।
No comments:
Post a Comment